Posts Tagged ‘idea’

alexithymia (1)

গত চারদিন থেকে সমস্যাটা হচ্ছে, ডান হাঁটুর নিচে একটা চিনচিনে যন্ত্রণা, সকালবেলা, মানে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দৌড়ানোর অভ্যেস আমার অনেককাল। রোজ না পারি, সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন আমি উঠি, তারপরে একটু পরিষ্কার হয়ে জামাপ্যান্ট চেঞ্জ করে কানে হেডফোনটা গুঁজে বেড়িয়ে পড়ি। তারপরে ঘণ্টাখানেক হেঁটে, দৌড়িয়ে হাত পা ছোঁড়াছুড়ি করে সাতটার মধ্যে ঘরে ফিরে আসি। অবশ্য ম্যারাথনটা তারপরেই শুরু হয়, বেলাদি আমার কাজের লোক, আমার জন্যে যতক্ষণে ব্রেকফাস্ট বানায়, আমি ততক্ষনে স্নান সেরে, ঠাকুরকে অল্প ফুল বেলপাতা দিয়ে তৈরি হয়ে নিই অফিসের জন্যে।

বেলাদি সকালে এসে ব্রেকফাস্ট বানায়, তারপরে দুপুরের খাবার রান্না করে, টিফিনে ভরে দিয়ে চলে যায়। আরও দুতিন বাড়ি কাজ করে বোধয়। বিকেলে আরেকবার আসে, তখন ঘর ঝাঁট দেয়, মোছে, আর রাতের খাবার রান্না করে দেয়। তেল মশলা কম দেয় আর এক্কেবারে দিদির মত যত্ন নিয়ে কাজ করে। একটা চাবিও দেওয়াই থাকে, কারণ বিকেলে যখন আসে বেলাদি, আমি তখন ফিরিনা। বেলাদি নিজের মত কাজ করে, আমার জন্যে খাবার ঢাকা রেখে চলে যায়। বেলাদির সঙ্গে আমার কথা বলার দরকার পরে না, খুব দরকারি কিছু না হলে। সেই দরকারিটা বেশিরভাগ সময়েই পরেরদিন আমি থাকবো না, আসার দরকার নেই, এই কথা টা বলার জন্যেই ব্যবহার হয়। আমার মনেও পড়েনা শেষ কবে আমি বেলাদির সঙ্গে কথা বলেছি। বেলাদিই মাঝে মাঝে কিছু পাড়ার খবর দিয়ে যায়, কিছু মশলাপাতি আনতে হলে বলে যায়, আর নিজে যদি ছুটি নিতে চায়, তখন একবার বেরনোর আগে জানিয়ে দিয়ে যায়, ব্যাপারটা অনেকটা নেহাত আপনি ভাববেন, তাই জানালাম, নাহলে ভাববেন না যেন অনুমতি নিচ্ছি। আমিও কেবল মাথা নেড়ে অধিকাংশ দিন কথা বলার কাজ সেরে নিই।

আমার স্বাভাবিক জীবন, বিবাহ একটা হয়েছিল, টেকেনি, চাকরি একটা করি, ভালই মাইনে দেয়, সুসময়ের, অসময়ের জন্যে কোনও বান্ধবী বা অন্য কারও বউ নেই, সত্যি বলতে আমার কিছুই নেই, চাকরি আর এই থাকার জায়গাটা ছাড়া। বেলাদিকে নিয়ে লিখলাম, কারণ তবুও যদি কিছু থাকার মধ্যে থাকে, সেটা এক ওই বেলাদি, যার সঙ্গেও আমার ক্বচিৎ কদাচিৎ কথা হয়। কলকাতার বাড়িতে বাবা মা আছে, একটা নিজের দিদিও আছে, তার বিয়ে হয়ে গেছে আর আমার প্রতি মোহভঙ্গ হতে হতে বাবা মা দিদি জামাইবাবু কারোরই আর আমাকে নিয়ে খুব একটা উৎসাহ নেই। আমিও আস্তে আস্তে তাদের এই মোহভঙ্গ হওয়াটা ভবিতব্য বলে চুপচাপ হজম করে গেছি। তাই আমার জ্বর সর্দি কাশি হলেও আমার সেবায় আমিই থাকি, আর হাঁটুতে চিনচিনে ব্যথা হলেও নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করতে হয়, কি করে হল, কেন হল আর তারপরে কি করে ঠিক হবে। আমার বন্ধু বান্ধবের অবশ্য অভাব নেই। আমার পয়সা আছে, তাই ফুটানি আছে, আর ফুটানি আছে বলে আমার বন্ধু বান্ধবও আছে। তারা মোটামুটি সবাইই অনেকদিনের। মাঝে মাঝে একসাথে বসি, পেটভরে মদ খাই, বা রাতেরবেলা গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি, তারপরে মাঝরাতে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ি যতক্ষণ না পরেরদিন বেলাদি এসে দশ পনের বার বেল বাজিয়ে আমার ঘুমের বারোটা না বাজায়। বেলাদিকে চাবি দেওয়া থাকলেও সকালে এসে আমার ঘুম না ভাঙ্গিয়ে ঢুকবে না, কারণ জানা নেই!

হাঁটুর ব্যথাটা আমাকে দুদিন ধরে কাবু করে রেখেছে। ডান পায়ের হাঁটুর ঠিক নিচে, মানে মালাইচাকির ঠিক নিচের দিকে। আঙ্গুল দিয়ে টিপলে ব্যথা নেই, চামচ দিয়ে মারলে ব্যথা নেই, ভলিনি লাগালে জ্বলে না, আইসপ্যাক দিলেও কষ্ট হয়না, শুধু দৌড়াতে গেলে বা সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলেই ব্যথা টা করে। আর ব্যথা টা বেশ ব্যথা, মানে আমার চিন্তাভাবনার অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে ইতিমধ্যেই। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি আরেকদিন দেখবো, তারপরে ডাক্তার। শক্ত করে একটা ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে নিয়েছি প্যান্টের নিচে, কিন্তু তারফলে গাড়ি চালাতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল, কিন্তু কিছু করার নেই। বিকেলে সন্দীপের বাড়িতে নিমন্ত্রন আছে। আসলে আমাদের একটা দল আছে, দলটা গোপনীয়, এবং যেহেতু আমি ছদ্মনামে লিখছি, তাই আমাকে কেউই চিনতে পারবে না আর আমার বন্ধুদের নাম এমনকি আমার কাজের লোকের নামও আমি আসল লিখছি না, তাই দলের ব্যাপারটা বলে দিলে খুব সমস্যার নয়। আমাদের দলটা আসলে ছ’টা লোকের, বা বলা ভালো ছ’টা বিবাহবিচ্ছিন্ন তরুনের ক্লাব। আমরা প্রত্যেকেই বিবাহ বিচ্ছিন্ন, মানে আমাদের সবারই বিয়ে ভেঙ্গে গেছে, তার সঙ্গে আরও দুটো ব্যাপারে মিল আছে, এক, আমরা প্রত্যেকেই এখন আমাদের বাবা মায়ের কাছেও একটা জঞ্ঝাট ছাড়া আর কিছু নই, আর দুই, আমরা প্রত্যেকেই সুখে আছি। আমরা মাঝে মাঝে দেখা করি, আর তারপরে অনেক কিছু করি, সেটা রাতেরবেলা মদ খেয়ে মাতলামি থেকে শুরু করে মেয়ে ভাড়া করে আনা পর্যন্ত সবই। আর বিপদে আপদে আমরা সবাই সবার একমাত্র আত্মীয়। তাই হাঁটুর ব্যথাটাও ডাক্তার দেখানোর থেকে ওদের দেখান বেশি দরকারি। আমাদের আরও অনেক বাজে কাজের মধ্যে একটা ভালো করি, যদিও সেটা ভালো না খারাপ আমরা খুব একটা সেটা নিয়ে চিন্তিত নই, কিন্তু আমরা সবাই কবিতা লিখি। আমরা মদ খেয়ে কাব্যচর্চা করি, যে যার নিজের লেখা পড়ি, কারও নতুন কবিতা মাথায় এলে মোবাইলে ভয়েস নোট করে রাখি, পরে খাতায় তুলবো বলে। তারপরে খাওয়া দাওয়া করে যে যার নিজের বাড়ি ফিরে আসি, কখনও কারও বাড়ি গিয়ে রাত্রিবাস করিনি আমরা। এর কোন কারণ নেই, নিজেদের মধ্যেও নিজেদের যৌনচেতনা নিয়ে কোনরকম ভয়ও নেই, কিন্তু এই একটা নিয়ম আমরা নিজেরাই বানিয়েছি, যাই হোক, যত রাতই হোক, বাড়ি ফিরে যাবো আমরা। আমরা একসাথে বেড়াতে গেলেও আলাদা আলাদা ঘর বুক করি। আসলে আমাদের মধ্যে কিছু নিয়ম আমরা নিজেরা তৈরি করেছি, নিজেদের কাছাকাছির মধ্যেও একটা দূরত্ব নিজেরা স্থির করে নিয়েছি, বোধয় আমাদের সবারই বিবাহিত জীবনের যে জায়গাটা সবথেকে বেশি ভঙ্গুর ছিল, সেই জায়গাটা আমরা এই বন্ধুত্বের জায়গায় আগে থেকেই নির্ধারিত করে বেঁধে দিয়েছি। গত রোববার আমার বাড়িতে ছিল পার্টি। খাবার বাইরে থেকে আনিয়েছিলাম, আর মদ আমি নিজে কিনে এনেছিলাম। সেদিন আবার আদিল এনেছিল গাঁজা, কোত্থেকে মালানা ক্রিম জোগাড় করেছে, সেটাই নিয়ে এসেছিল, মাঝ রাত পর্যন্ত চলেছিল আমাদের ‘বাবা’ ‘মা’র’ পার্টি। সৌপর্ণ আর আমি দুজনে বাঙালি, আদিল মারাঠি, সাগর দিল্লীর আর আমাদের মধ্যে সবথেকে হুল্লোড়বাজ আর সবথেকে বেশি উত্তেজক চরিত্র চন্দ্রা। চন্দ্রা কোন মেয়ের নাম নয়, চন্দ্রার পুরো নাম চন্দ্রশেখর মিশ্রা, সত্যিকারের বিহারী। সত্যিকারের বিহারী বলার কারণ হল, চন্দ্রা ইংরিজিও বলে বিহারীদের মত করে আর আমাদের মধ্যে একমাত্র লোক যে খৈনি খায়, শুধু খায় বললে ভুল হবে, গর্বের সাথে খায়। আমাদের প্রথম রাষ্ট্রপতি বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদও নাকি খৈনি খেতেন। ওর সঙ্গে আমরা কেউ তর্ক করিনা, কারণ হয় ও তর্কে জিতে যাবে, আর নয়তো রেগে যাবে। এই একমাত্র চন্দ্রাকে নিয়ে আমরা নিশ্চিত ওর ডিভোর্স হওয়ার পরে সত্ত্যিই দুজনেই বেঁচেছে।

সৌপর্ণ ভালো গীটার বাজায়, সে মাঝে মাঝে একটা একটা করে সুর ধরে, উঁহু উঁহু করে গুনগুন করে, কখনও আমরাও সঙ্গ দিলে গানটা শেষ হয়, নাহলে নিজেই ব্যস্ত থাকে। ওর মদ খাওয়াটা দেখে মনে হবে কতকাল যেন না খেয়ে আছে, গ্লাসে ঢালার দেরী, ঢাললেই ও নিজের গলায় ঢেলে দেবে। আদিলের আবার ধর্মের মানা, তাই ও খুব কম সময়েই আমাদের সঙ্গে মদ খায়, বেশিরভাগ সময়ে খায় গাঁজা। কোথা থেকে জোগাড় করে ওই জানে! সাগর দিল্লীর ছেলে, তাই মদ নিয়ে এক্কেবারেই বাছবিচার নেই, না বলতে শেখেনি, আমার কথা আমি আগেই বলেছি, আরেকটু বিস্তারিত বলতে গেলে সন্ধ্যেবেলার পর থেকে আমি একা থাকলেও মদ খাই, আর পার্টি তে গেলেও খাই আর পূজাপার্বণের দিনে আরও বেশি করে খাই, তবে আমি খাই খুব ধীরে, অনেক সময় নিয়ে।

পার্টিতে পৌঁছে দেখলাম আমার আগেই সবাই পৌঁছে গেছে, গীটারে টুং টাং শুরু হয়েছে, আদিল হাতের তেলোয় খৈনি ডলছে আর চন্দ্রা গ্লাস ধুচ্ছে। সাগর ল্যাপটপটা নিয়ে পড়েছে, কিছু একটা ইংরিজি সিরিজ খুঁজে বের করতে চায়। সবার কথাই বলেছি, কিন্তু সন্দীপের কথা বলিনি, কেন বলিনি, তার একটা কারণ আছে। ওটা আবার মদ না খেলে হয় না। চন্দ্রা গ্লাস টাস ধুয়ে আসার পরে আমরা সবাই বসলাম তাস নিয়ে। এটাও আমাদের একটা নিয়ম। নিজের পছন্দমত কিছু করার আগে সবার সঙ্গে সবাইকে একসাথে সময় দিতে হবে, খেলতে হবে একসাথে, তাই তাস। বিবি পাশানোর খেলা, এটা আমি ভালো পারি, তিন গেমের পরে দেখা গেল আমিই এগিয়ে, সৌপর্ণ উঠে আবার গীটার নিয়ে বসে গেল, সাগর টিভি’র সাথে ল্যাপটপ গুঁজে কিছু একটা চালানর চেষ্টা করছে, আর আমি আমার দ্বিতীয় পেগটা খেয়ে গ্লাস নামিয়ে সিগারেট ধরিয়েছি। এখন আমার স্বভাব হল, চুপ করে যাওয়া আর অন্যকে ভালকরে খুঁটিয়ে দেখা, কে কি করছে, কি বলছে, সেটা শোনা, ইচ্ছে হলে মতামত দেওয়া। সন্দীপ অনেকটা আমার মত করেই শুরু করে, আজও আমার মতই দ্বিতীয় পেগ অব্দি খেয়েছে, কিন্তু ওর দ্বিতীয় থেকেই চড়তে থাকে, তাই একটু এলোমেলো, তারপরে একটু দম নিয়ে চারপাশে তাকিয়ে একটা হাই তুলে বলল, “একটা কথা বলতে চাই,” আমরা অবাক হলাম না, প্রত্যেক দিনেই ও এইসময় একটা কথা বলতে চায়, আর মজার ব্যাপার, কথাটা এমন কিছু বলে, যেটা নিয়েই তর্ক শুরু হয়, আলোচনা হয়, নেশা আরও চড়ে, মোট কথা আমরা সবাই ওর সেই কথা উপভোগ করি। গলাটা খাঁকড়িয়ে আবার শুরু করলো, “কাল রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি।“ আমরা সবাই ওর দিকে ঘুরে বসলাম, সৌপর্ণ গীটার সরিয়ে তাকাল সন্দীপের দিকে, আদিল একটা চোখ বন্ধ, আর আরেকটা খুলে তাকাল ওর দিকে, চন্দ্রা কারও বাড়ি গেলে সেখানে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নেই, লুঙ্গি পরে আছে এখন, সে লুঙ্গিটা ভালো করে ছড়িয়ে বসলো সামনের দিকে, সাগর কোয়ালিটিতে বিশ্বাস করেনা, ওর খেলা পরিমানে, এতক্ষনে তিন চারটে পেগ উড়িয়ে দেওয়ার অভ্যেস ওর, তারপরে জল খায় অনেকটা, ঘণ্টাখানেক একফোঁটা খাবে না, তারপরে আরও তিন চারটে খেয়ে তবে তার বিশ্রাম, সেও সন্দীপের দিকে তাকাল, মোটামুটি একটা মিশাইল আকাশ ফুঁড়ে উঠলো বলে! সন্দীপ সবাইকে ভালো করে ঘার ঘুরিয়ে দেখে নিল, তারপরে বলল, “কাল স্বপ্নে দেখেছি, আমি একটা নেপালি মেয়ের সাথে সেক্স করছি, আর মেয়েটা মোটামুটি পঁয়ত্রিশ চল্লিশ বছর বয়েসি, ফরসা গায়ের রং, আখের রস বিক্রি করছিল কোন একটা রাস্তায়, কালো রঙের পাজামা আর নীল রঙের ফুলহাতা জামা পরে, ডানহাতের বুড়ো আঙ্গুলে একটা ট্যাটুও ছিল, এ লেখা, তার সঙ্গে একথা সেকথার পরে প্রস্তাব দিলাম সেক্সের, সঙ্গে সঙ্গে রাজি, আমি আমার সারাদিনের কাজ করে রাতের বেলা অপেক্ষা করছিলাম হোটেলে, মেয়েটা এলো, তারপরে অনেকক্ষণ ধরে করলাম আমরা, তারপরে একসাথে ঘুমিয়ে পড়লাম, আর কিছু মনে নেই, ব্যাস, সকালবেলা ঘুম ভেঙ্গে দেখলাম রাজিয়া এসেগেছে।“ রাজিয়া ওর কাজের লোক।

আমার এই দলটাকে এত ভালো লাগার এটাও একটা কারণ, আমরা আমাদের কথাবার্তার মাঝে কোন কিছুই ছ্যাবলামি করে উড়িয়ে দি’না। হতে পারে, তেমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, কিন্তু আমাদের নিয়মের আরেকটা নিয়ম হল, সবাই সবার কথা শুনবে, তারপরে মতামত দিতে পারবে, তাকে আহত না করে, আর মতামত না থাকলে বা মতামতে অন্য কেউ আহত হওয়ার উপাদান থাকলে, মুখে কুলুপ এঁটে থাকো। আর সবার বলার স্বাধীনতা রয়েছে, কে কি ভাবল, ভাবার দরকার নেই, শুধু এটা মনে রাখলেই হল যে, যে কথায় অন্য কেউ আঘাত পেতে পারে, সেটা না বলাই ভালো, আর যদিও বা বলেও ফেল, অন্য কেউ শুধরে দিলে সেটা মেনে নিতেই হবে। আমরা তাই যা খুশি বলি, তারপরে কেউ বারণ করলে আর বলিনা। সন্দীপের স্বপ্ন শোনার পরে আমাদের কিছু বক্তব্য থাকতে পারে কি’না, সেটা ভাবার কাজ আমার তেমন খুব একটা নয়, এইসবের দায়িত্বে থাকে সৌপর্ণ, তার এইসব ব্যপারে খুব উৎসাহ। সে জিগ্যাসা করলো, “কখন দেখেছ স্বপ্ন টা? প্রথম রাতে, না সকালের দিকে?”

– সকালের দিকে, আর কেন জানিনা মনে হল খুব জ্যান্ত সবকিছু, মানে রাতের স্বপ্ন খুব একটা মনে থাকেনা আমার, কিন্তু কাল রাতের স্বপ্ন টা হুবুহু মনে আছে আমার, সন্দীপ বলল

সাগরের এখন বিরতির সময়, মানে এই সময়ে ও কিছু খাবে না, মাঝে মাঝে সিগারেট খাবে আর শুনবে সবার কথা, চন্দ্রা বলল, কোন জায়গা কিছু মনে আছে? ভাবখানা এমন যে জায়গা বললেই ও ঠিক খুঁজে এনে দেবে সেই মেয়েটাকে। আমি একবারে হাফ গ্লাসের মত তৃতীয় পেগটা গলায় ঢেলে বললাম, “চলো নেপাল ঘুরে আসি, কিম্বা, ভূটান, কিম্বা, সিকিম যাওয়া যেতেই পারে। মেয়েটাকে খুঁজে পাওয়া যাক বা না যাক, চেপটা চোখের দেশ থেকে ঘুরে এলে মন্দ হয়না।“ কথাটা সবার পছন্দ হল। আদিল অনেকক্ষণ চুপচাপ বসেছিল, ওর বোধয় নেশাটা চড়েছে। আদিলের গাড়ির ড্রাইভার আছে, বাকি আমরা নিজেরাই গাড়ি চালাই। আদিল খানিকক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা বালিশ টেনে নিয়ে আধশোয়া হয়ে বলল, “একটা জায়গায় যেতে পারি আমরা, জায়গাটা খুব দূরে নয়, কিন্তু পাহাড়ি, আর সেখানে নেপালি পাবে কিনা জানিনা, কিন্তু অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়না, তাই ঘুরে এলে মনটা ভালো থাকবে।“ সন্দীপ সবার কথা শুনছিল, সবার মতামত দেওয়া হলে, নিজেই বলে উঠলো, আমি বুঝতে পারছিনা, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, জায়গাটা, না মেয়েটা, না সবমিলিয়ে কিছু একটা। আসলে সেক্সের ব্যপারটা না থাকলে বাকি স্বপ্নের আমি খুব একটা মানে বের করতে পারছিনা। কেনই বা আমার মেয়েটার কালো পাজামা আর নীল রঙের হাতা গোটানো জামার কথা মনে থাকবে?” সৌপর্ণ বলল, “একটু আগেই তো বললে যে ফুলহাতা জামা ছিল!” সন্দীপ জবাব দিল, “জামা টা ফুলহাতা ছিল বলেই মনে হয়, কিন্তু অল্প হাতা গোটানো ছিল।“

সাগর বাথরুমে গেছিলো, সে ফিরে এসে জিগ্যাসা করলো, “একটা কথা বলবে আমাকে কেউ, তোমাদের মধ্যে আর কেউ স্বপ্ন দেখে মনে রাখতে পার? মানে ধর স্বপ্ন দেখলে, তারপরে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে খানিকক্ষণ মনে থাকার পরে আমরা সাধারণত ভুলে যাই, কিন্তু কখন স্বপ্নটা মনে থাকে?” ওর মুখ দেখে বুঝতে পারলাম, কিছু একটা ভেবে এসেছে সে, আমি মুখ খুললাম, “আমার খুব কম থাকে, কিন্তু যদি খারাপ কিছু দেখি, আর সেখানে পরিচিত কাউকে দেখি, তখন ঘুম থেকে ওঠার পরেও মনে থাকে, অনেকসময় বিকেল পর্যন্ত মনে থাকে, এমনকি কিছু কিছু স্বপ্ন অনেকদিন মনে থাকে। আর আরেকটা কথা, স্বপ্নে সেক্সের কথাও মনে থাকে, যদি সেটা খুবই উপভোগ্য কিছু হয়, মানে অনেকসময় আমি স্বপ্নে হয়তো কারসাথে সেক্স করলাম, তারপরে বুঝলাম সেই মেয়েটিকে আমি চিনি, হতে পারে তার সাথে আমার কথা হয়নি কখনও, কিন্তু স্বপ্নে তার সাথে আমি মিলিত হয়েছি, তখন একটু খারাপ খারাপ লাগাও থাকে যদিও, কিন্তু মনে থাকে পুরো বিষয়টা, হ্যাঁ তবে একটা কথা, আমি মনে করলেও এরকম জামা প্যান্টের রং মনে থাকার মত কখনও কিছু স্বপ্নে দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না”। আমি থামলাম, বেশি বলে ফেলেছি হয়তো, তবে এখানে বেশি কম বলার উপর কেউ কাউকে বিচার করেনা, পুরনো কথা কারও সাথে শেয়ার করলেও সেটা নিয়ে কেউ কথা শোনায় না, আর সব থেকে বড় কথা, আমাদের দলে কথাটা কথা হিসেবেই নেওয়া হয়, পরে কোন একটা সময় সেটা নিয়ে খোঁচা দেওয়ার জন্যে তুলে রাখা হয়না। সাগর মন দিয়ে শুনল আমার কথা, আদিল শুকনো মানুষ, সে দুটো সিগারেট বানায়, দ্বিতীয় সিগারেটে হাত দেওয়ার অর্থ, সে এখন পুরোপুরি গল্পে ডুবে গেছে, চন্দ্রা চোখ বুজে বসেছিল, সে এবার বলল, “আমার মনে হয় আমরা হয় খুব বেশি আনন্দের জিনিসের কথা ভাবি, আর নয়তো খুব দুঃখের কথা, কিন্তু সেটা স্বপ্নে দেখলে কিন্তু খুব একটা মনে থাকে না, মনে থাকে কখন?” সাগর কথাটা ধরে বলল, “যখন আমরা নিজেরাই নিজেদের স্বপ্নে অবাক হয়ে যাই”। আমরা সবাই একসাথে বলে উঠলাম, ঠিক তাই। কিন্তু কোনজায়গাতে আমরা অবাক হয়েছি, সেটা নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যেও সংশয় আছে, নেপালি মেয়ে, না তার জামা, না মেয়েটির সঙ্গে আখের রস বেচার সাথে সেক্সের যোগাযোগ, অন্তত আমার নিজের তাই মনে হচ্ছিল। সৌপর্ণ বোধয় আমার মনের কথাটা বুঝতে পেরেছিল, বলল, “সন্দীপের স্বপ্নের কোন জায়গাটাতে আমাদের অবাক হওয়ার ছিল?”

চন্দ্রা বলে উঠলো, “অবাক হওয়ার উপাদান সবকিছুতেই ছিল, প্রথমত সে একটি মেয়ে ছিল, দ্বিতীয়ত তার জামা প্যান্টের মধ্যে কোন হাতছানি ছিলোনা, সে কাজ করত, মানে আখের রস বিক্রি করত, তার সঙ্গে কথা বলার পরে সে সেক্সে রাজি হয়, তার হাতের আঙ্গুলে ট্যাটুর কথাও মনে থাকার অর্থ মনে মনে তাকে ভাললেগে গেছিল, তাই সেক্সের ব্যাপারে খুব একটা ভণিতা করতে হয়নি, পুরোটাই তো অবাক করার মত, তাই না?” একটু দম নিয়ে সে বলতে থাকলো, “আরও একটা জিনিস তোমরা ভেবে দেখ, আমরা বিবাহ বিচ্ছিন্ন, কিন্তু মানুষ তো!”

সন্দীপ অপেক্ষা করছিল কিছু বলার, “…আর সেটা একদিনে হয়নি, যতদূর জানি, আমাদের সবাইকে একটা পথের মধ্যে দিয়ে চলে আলাদা হতে হয়েছে, কখনও কখনও সেটা খুব তিক্ততার মধ্যে দিয়ে, আমাদের ভিতরের একটা প্রাণী বোধয় অপেক্ষা করছিল সবকিছুর শেষেও একটু ভালবাসা, অনেকটা সেক্স আর একটু জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকার জন্যে।“

আমাদের ওঠার সময় হয়ে এসেছিল, হাঁটুর ব্যথার কথাটা বলা হয়ে ওঠেনি, খুব একটা দরকার নেই, ব্যথা এমন একটা জিনিস, যেটা আসে, আবার চলে যায়, বেশি জ্বালাতন করলে ডাক্তার, আর তার ইচ্ছে হলে কিছুটা অংশ কেটে বাদ দেওয়া, ব্যস, বাকিটা,  জীবনই আমাদের শিখিয়ে পড়িয়ে নেয়।

সবাই সবার কথা ভাবতে ভাবতে খেয়ে নিলাম, তারপরে একসাথে হাত ধরে বললাম, “জিন্দেগী মতলব, জিনা শিখো”, এটাও আমাদের একটা নিয়ম। আমাদের সভাভঙ্গ হয় এই মন্ত্র দিয়ে।

সৌগত

মুম্বাই

২৩.১১.২০১৮

Blog

ভালো একটা গল্পের বইয়ের নাম বলতো! যীশু তাকাল আমার দিকে, যেন বাংলার সাহিত্যের খবর আমি একাই রাখি, হ্যাঁ এটা মানছি আর কারও থেকে বেশি জানি বা না জানি, যীশুর থেকে আমি বেশিই জানি। আমি প্রত্যেক সপ্তাহে কমকরে একটা বই পড়ি, আর সেটা আমি যতটা জানি, যীশুও তার থেকে কম জানে না। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। এইসব মালগুলোকে বিশ্বাস নেই, কখন সত্যি করে জানতে চায় আর কখন আমার মজা ওড়াবার জন্যে, সেটাই কনফিউসিং। আমি জিগ্যাসা করলাম, কিরকম বই পড়তে চাস! জবাব এলো বেশ ধাসু একটা, বেশ প্রেম আছে, গোয়েন্দা আছে, মানে রহস্য, সঙ্গে কোথাও বেড়িয়ে আসা যাবে, রগরগে দুতিনতে সিন থাকলে পড়ার মজা আরও বেড়ে যায়। আমি এবার সত্যি হতাশ হলাম, যীশু বই খুঁজছে, না অ্যামাজন প্রাইমের সিরিজ খুঁজছে বোঝা মুশকিল। কাউকে এরকম কাস্টমাইজড বই খুঁজতে দেখেছি বলে মনে পড়লো না, আর আমার সন্ধানেও এরকম কোনও বইয়ের খোঁজ আছে, এমন সম্ভাবনা কমই। আমি একটু সময় চেয়ে নিলাম। বললাম, ভাইটি আমার, ষ্টেশনের হলদে কাগজের চটি বইয়ের সাথে বুদ্ধদেব গুহকে মিশিয়ে, সঙ্গে বেশ খানিকটা পঞ্চাশ পরতের ছাইরং মেশালে যেটা হবে, সেটা ভাবতে একটু সময় লাগবে। যীশু যদিও খুশি হলনা আমার কথা শুনে, কিন্তু আমার কোনভাবেই বিশ্বাস হয়না যে ওর বইটা খুঁজে পাওয়ার পরেও পড়ার খুব একটা তাড়া আছে, তাই সময় চেয়ে ভাগালাম, কিন্তু একটা চিন্তা মাথার মধ্যে ঢুকে বসলো, মালটা ফালতু বকে ঠিকই কিন্তু সত্যিতো সব মশলা মিশিয়ে একটা ভালো গল্প পাওয়ার মধ্যে আপত্ত্যি কি থাকতে পারে?

ব্যোমকেশ বকশীর গল্পেও সবই আছে, কিন্তু সবই পরিমিতমাপে, কেবল গোয়েন্দাগিরিটা ছাড়া, মানে ওখানে মশলা সবই পড়েছে, কিন্তু একটা মশলায় জোর বেশি দেওয়া হয়েছে, বুদ্ধদেব বাবুর আবার প্রেম দেখানোয় যতটা আন্তরিকতা, ততটাই সেটার খুল্লামখুল্লা নিয়ে উন্নাসিকতা। ইংরিজি বইতেও পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী মাপে মাপে জিনিস দেওয়া থাকে, কোথাও রগরগে যৌনতা, কোথাও নিখাদ প্রেমের গল্প, আবার কোথাও বেড়িয়ে আসার লম্বা গল্প। যীশু কথাটা বলে যাওয়ার পর থেকেই মাথার মধ্যে বেশ একটা অন্যরকম ভাবনা আসছে, মনে হচ্ছে, যীশুর গল্পটা আমি মোটামুটি বুঝতে পারছি, আরেক্টু বুঝলেই আর আরেক্টু ভাবলেই আমার মাথায় একটা গল্প আসবে, আর সেটা আমাকে তক্ষুনি লিখে ফেলতে হবে, কারণ আমার গল্প লেখার হাত খারাপ নয়, সমস্যা অন্য জায়গায়, আমার গল্প মনে আসে রাতের বেলা শুয়ে শুয়ে, আর সেই গল্প ভাবতে ভাবতেই আমি ঘুমিয়ে পড়ি, বেশ সুন্দর একখানা স্বপ্ন দেখতে দেখতে, আর সকাল হলেই গল্পও শেষ, স্বপ্নও শেষ। এই করে সত্যি আমার অনেক ভালো ভালো গল্পের প্লট হাতছাড়া হয়েছে।

কোন একজন মহাপুরুষ বলেছিলেন, তুমি ঘুমিয়ে যা দেখ, সেটা স্বপ্ন নয়, তুমি যেটা দেখতে চেয়ে ঘুমাতে পারনা, সেটাই স্বপ্ন। আমিও মানছি সেকথা, কিন্তু যেহেতু স্বপ্নের সঙ্গে ঘুমটা ফ্রিতে পাওয়া যায়, তাই ঘুমনোর সুযোগ পেলে আমি গল্পও লেখার সুযোগকে অনায়াসে বাইপাস করে নিই। আসলে এখন এইসব ভাবারও একটা কারণ আছে, বউ গেছে বাপের বাড়ি আর এদিকে অফিসে টানা তিনদিনের ছুটি। আমি এমনিতেও কিছু লিখবো লিখবো ভাবছিলাম, কারণ শেষ লিখেছিলাম মাস তিনেক আগে, আর সেটা ছাপাও হয়েছিল মোটামুটি একটা কাগজে, দুএকটা লোক বেশ বাহবাও দিয়েছিল, যদিও খ্যাতি বলতে সেভাবে কিছুই আমার কপালে নেই, আর আজকাল বেশ কয়েকবার চেষ্টা চরিত্র করার পরে বুঝতে পেরেছি, লেখার জন্যেই লেখা ভালো, তাতে আর যাই হোক, মোহ থাকেনা, আর ছাপার কালিতে বেরনোর পরেও লোকে না পড়লে মন খারাপ হয়না। তাই আমি আমার মতই লিখি, কখনও লেখার পরে সেটা ভালো লাগলে, নিজেই সেটার একটা প্রিন্ট বের করে প্রুফ চেক করে রাখি। তারপরে আবার কখনও খেয়াল হলে সেটা পাঠিয়ে দি কোন জায়গায়। আজকাল ডিজিটাল প্লাটফর্মে একটা ভালো জায়গা হয়েছে, কিছু কিছু সাইটে আমার লেখা লোকে পড়ে, শুনেছি ভালও বলে, তাই মাঝে মাঝে সত্যিই লেখার একটা তাগিদ, যেটা আগে তেমন ছিল না, সেটা হয়েছে। আগে লিখতাম লিখতে ভালো লাগত বলে, এখনও তাই, কিন্তু সঙ্গে ওই প্রশংসা শোনার একটা মানসিকতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই প্রশংসায় লক্ষ্মী আমদানি হয়না, আর খ্যাতি হওয়ারও সম্ভাবনা খুবই কম। তাই আমি আমার নিজের জন্যে লিখি, ভালো লাগলে, কিছু ইচ্ছে হলে লিখি, আর মন শান্ত করার জন্যে লিখি, ব্যাস। আমার লেখার জবাবদিহি আমি নিজেকেই নিজে করি, কিন্তু এই প্রথমবার অন্য কারও কথা ভেবে, তার পরামর্শ মত লেখার একটা ইচ্ছে তৈরি হয়েছে। এমন একটা গল্পও ভাবতে হবে, জাতে বেশ ভালো কোথাও একটা জায়গায় বেড়ানো যাবে, হটাত করে একটা প্রেম হবে, প্রেমে ঘনিষ্ঠতা হবে, তারপরে প্রেমিকার বা প্রেমিকের আগের কোন একটা সম্পর্কের আবার বন্ধ দরজার তালা ভাঙবে, অতীতের স্মৃতিতে কিছু খাপছাড়া গল্প তৈরি হবে, টানটান কিছু ঘটনা ঘটবে, তারপরে হটাত একজনের একটা অতীতের সম্পর্কের টানাপড়েন চলে আসবে, তারফলে কেউ একজন হয় মরে যাবে, আর নয়তো গায়েব হয়ে যাবে, তারপরে তাদের মধ্যে সন্দেহের বাষ্প ঘিরে থাকবে আরও কিছুদিন, এরমধ্যে প্রয়োজনের তাগিদে নিজেরাই আবার নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক জোড়া লাগানোর চেষ্টা করবে, আর তারপরে তাদের মধ্যে একটা ঘটনাবহুল, মানে বেশ রগরগে যৌনসম্পর্ক তৈরি হবে, তারপরে সেটা নিয়ে আরেকটু ভাবার আগেই চলে আসবে তাদের ফেরার পালা। তারা হয় নতুন পাওয়া সম্পর্ক নিয়ে বেঁচে থাকবে, কিম্বা কিছু একটা ঘটতে হবে, যার জন্যে সিনেমার মত করে বুঝতে পারবে ভাত ডাল আর বিরিয়ানির পার্থক্যটা, আর নিজেদের আসল, মানে পুরনো প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যকার চেনা ছকে ফিরে যাবে। মোটামুটি এইতুকু ভাবার পরে আমার নিতান্তই খারাপ লাগলো না। মোটামুটি একটা কঙ্কাল বানানো গেছে, এবার খুঁজতে হবে চরিত্র, তাতে প্রান প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তাদের কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে, তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু চাহিদা, অভ্যেস যোগ করতে হবে যাতে সবাই একেকটি আলাদা আলাদা চরিত্র হিসেবে প্রকাশ পায়, তারপরে তাদের মধ্যে ঘটনা ঘটাতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে নতুন কিছু প্রেমের কারণ, যেটা নিয়ে সাহিত্যে চর্চা কম হয়েছে, সঙ্গে আবার এটাও মাথায় রাখতে হবে যে এখনকার জেনারেশন আবার আগেকার মত চাঁদ দেখেই প্রেমে পড়ে যাওয়ার মত করে প্রেমে পরে না, চেহারা দেখেও না, সবাই স্বাবলম্বী, তাই মানিব্যাগ দেখেও না।

এখনকার প্রেমের কারণ বোঝা খুবই মুশকিল, কিন্তু তাও কিছু জিনিস চিরন্তন, যেমন আগেও গোলাপ দেওয়া প্রথা ছিল, এখনও আছে, এখনও প্রেম মানেই রাগারাগি, জোর ফলানো, অন্যের চোখে ঈর্ষা, একটা হাসির জন্যে নিজেকে ধন্য মনে করা ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব জিনিস ভালো করে মশালা দিয়ে ঢোকাতে হবে গল্পের ভিতরে। সবার আগে দরকার একটা জায়গা খুঁজে বের করা যেখানে আমার গল্পের চরিত্ররা বেড়াতে যাবে বা কোন দরকারে যাবে, কারণটা পরে খুঁজে বের করতে হবে। বেড়ানোর জায়গা বলতে এমন একটা জায়গা খুঁজতে হবে যে জায়গাটা তেমন পরিচিত নয়, মানে তেমন হলে একটা সুবিধে হল জায়গার গল্পও শোনার জন্যে কিছু এক্সট্রা পাঠক পাওয়া যাবে, যেমন সোনার কেল্লার সময় হয়েছিল।

শান্তিনিকেতন জায়গা হিসেবে অসাধারন কিন্তু বড্ড বেশি বহুল চর্চিত। ওখানে প্রেমের গল্পের খুব একটা বেশি লিখিত ইতিহাস নেই, মানে এক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছাড়া নেই, কিন্তু রবিবাবুর গল্পেই সবাই মোটামুটি সব কিছু কভার হয়ে গেছে, তাই নতুন করে তেমন কিছু আবিষ্কার করার মত সাহিত্যদক্ষতা না থাকার কারনে বাতিল করলাম। দিঘা, পুরী, দার্জিলিং বাদ দিতেই হয় কারণ দুটো কারনে, এক, সেখানে বিবাহিত লোকের ভিড় বেশি, আর দুই, বাঙ্গালী এতবার ওখানে গেছে যে অলিগলি চিনে গেছে, কিছু একটা ভুল লিখলেই তুলনা টেনে আমার লেখার বাপবাপান্ত করবে। আর সত্যি বলতে কি, বিবাহিত লোকেদের মাঝে চারটে অবিবাহিত লোকের প্রেমকাহিনী বড্ড চোখে লাগবে, আমার গল্পের চরিত্ররা সহজ নাও হতে পারে, মাঝখান থেকে বেড়াতে গিয়েও হোটেলের চার দেওয়ালে বন্দি একটা গল্পও হয়ে যাবে। দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু তাহলে তাদের দুতিনতে জায়গায় নিয়ে যেতে হবে, কারণ সাধারণত দূরে বেড়াতে বেড়িয়ে একজায়গায় কেউ বেশিদিন থাকেনা, আর বেশিদিন না থাকলে প্রেমটা হবে কখন আর ওই যীশুর কথামতো রগরগে যৌনতাটা ঢুকবে কখন! আর যদি ধরা যায় চারজনেই একসাথেই ঘুরবে, কলকাতা থেকে যাত্রা শুরুর আগে থেকে তারা পরস্পরকে চেনে জানে, একসাথেই পরিকল্পনা করেছে, ধরা যাক এমন চারজন বন্ধুর দল, যারা বেড়াতে যাবো বলেই একসাথে টিকিট করে বেরিয়েছে, তারপরে একসাথে ট্রেনে করে কোথাও পৌঁছবে, একটা জুটি সকালে সোনারঙা সূর্যের ঘুম ভাঙ্গা দেখবে, আর আরেকটা জুটি ভালবাসবে নিভু নিভু হতে হতে হথাত সূর্যের ডুবে যাওয়া, অন্ধকারের রং গায়ে মেখে ঘনিষ্ঠ হবে তারা, তারপরে হোটেলে ফিরে এসে একসাথে মদ খাবে, অনেক গল্প করবে, জীবনের দার্শনিকতা নিয়ে বড় বড় বাতেল্লা দেবে, কখনওবা কথা বলতে বলতে মুখ ফস্কে কিছু একটা নিজেদেরই গোপন কথা, গভীর অসুখের কথা বলে ফেলবে, তারপরে কখন কার চোখ, কার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর খুঁজে নেবে, বাইরে অন্ধকার আরও ঘন হয়ে এলে, আর মদের বোতল শেষ হয়ে এলে, তারপরে  যে যার আসল ঘরে চলে যাবে। পুরুষ দুই বন্ধু শুধু বাইরে থাকবে, দুজনে একসাথে সিগারেট খাবে, আর বুঝতে পারবে একটা কোথাও ভুল হচ্ছে, বা হয়তো ভাববে, সবাই কি ভালো অভিনয় করছে, সবাই সব জানে, বোঝে, কিন্তু তবু কেউ কারও কাছে ধরা পড়েনা, কেউ কারও কাছে উত্তর খোঁজে না।

অনেকটা ভাবা হয়েগেছে একসাথে, আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি পেয়ে গেছি, আমার গল্পের চরিত্ররা কোথায় যাবে, সেটাও ভেবে নিয়েছি, একটা বড়সড় ঝগড়ার ঘটনা থাকবে, সেখানে পুরুষ নারীর একটা আদিমতম প্রশ্ন থাকবে, “তোমার থেকে আমি কি পেয়েছি বলতে পার!”, আর আরও একটা আদিম স্বীকারোক্তি থা্কবে, “তোমাকে আমার চেনা আছে মিস্টার…”।

বালিশটা টেনে শুয়ে পড়লাম, খাতাটা বসার ঘরে আছে, ঘুম থেকে উঠেই লিখতে বসে যাবো সক্কালসক্কাল।

 

সৌগত

10.11.2018 – Mumbai

 

Jodi 01

হোটেল উর্বশীর পাশ দিয়ে গলিটা ধরে সোজা গঙ্গায় নেমে যাওয়ার রাস্তা দিন তিনেক আগেই খুঁজে পেয়েছিলাম। একটা বাঙ্গালি আছে, মানে একটা নয়, অনেকই আছে, তবে আমি বলছি বাঙ্গালি চায়ের দোকানের কথা, মধু নাম লোকটার। হৃষীকেশে আসার পরের দিনেই সকালবেলা দেখা। কথা বলতে বলতেই বুঝলাম, মানে সে বুঝল যে আমি বাঙ্গালি। অবশ্য আজ এই পঁয়ষট্টি হবো হবো বয়েসে ভারতের এগারোটা রাজ্যে কাজ করার পরেও আমার সঙ্গে কথা বলার পরে কেউ একটু সুযোগ পেলেই এটা জিজ্ঞেস করতে ছাড়েনি যে, আপনি বাঙ্গালি! আজব ব্যাপার, এতদিন, মানে প্রায় চল্লিশ বছর বাইরে কাটিয়েও আমার কথা শুনে নাকি দিব্য বোঝা যায় এই মালটা আলুপোস্ত ডাল ভাত ছাড়া বোঝে না। অবিশ্যি তাতে আমার খুব একটা কিছু যায় আসে না। তা যা বলছিলাম, তো সেই মধুর দোকানে এক কাপ গরম গঙ্গাজল, যেটাকে ও এখানে চা বলে দিব্য চালিয়ে যাচ্ছে, সেটা খেয়ে ঘণ্টা খানেক চক্কর মেরে দেখে আসি দেশি বিদেশিগুলো কেমন সব শরীর চর্চা করছে সক্কালসক্কাল। বলতে গেলে এটা আমার ফ্রিতে চৌকিদারি আরকি! ওরাও আমাকে পাত্তা দেয়না, আমিও মোটেই পাত্তা খুঁজি না। উর্বশী হোটেলের পাশের রাস্তাটা আমাকে মধুই বলেছিল। মধু লোকটা বেশ অদ্ভুত। মধ্য বয়েসি লোক, হৃষীকেশে চা বেচছে প্রায় দশ বছর। আস্তে আস্তে এখানেই সব গুছিয়ে নিয়েছে। নিজে থেকেই কথা বলে, নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়। এই যেমন আজই সকালে এরকম একটা ঘটনা হল, জানেন কাকা, আজকাল এই বিদেশীদের চক্করে ড্রাগের ব্যেবসা খুব বেড়ে গেছে, আসবে সব যোগের নামে, তারপর এখানে ওখানে ব্যোম ভোলে বলে শুয়ে পরবে এর ওর সাথে, ওদের দেশে তো এইসবই চলে। একদিন সকালে দেখি আমার দোকানের সামনে শুয়ে আছে, গায়ে কাপড় চোপর নেই বল্লেই চলে, কিন্তু বিদেশি, কিছু বলার নেই, হই হই করে ঘুম থেকে তুলে এক কাপ চা খাইয়ে বিদায় করলাম। চা খাবে কি, মুখ দিয়ে তখনও নেশার ঘোর কাটেনি। পুলিশও সব জানে, কিন্তু কারুর কিসসু করার নাই, অতিথি দেবো ভব। আমার চা খাওয়া শেষ হলে, আমিও উঠে পড়ি।

এইবার নিয়ে চার বছর হল, আমি, মানে আমরা প্রত্যেক শীতের সময় এখানে এসে দিন দশেক কাটিয়ে যাই। স্ত্রীটি আমার শীতকাতুরে, সে সক্কাল সক্কাল বেরোতে চায়না, আর আমার আবার সকাল হলে ঘরের মধ্যে বসে থাকতে ইচ্ছে করেনা। গতবছরে এখানেই একটা হোটেলের সঙ্গে বন্দোবস্ত করে নিয়েছি বছরে দশদিন থাকবো বলে, সে ব্যাটাও বাঙ্গালি, তাই বুড়ো-বুড়ীকে হই হই করে স্বাগতম করে। আর এমনিতেও শীতকালে দিল্লির ঠাণ্ডাতে কাঁপতে থাকা জনতা খুব একটা এদিকে আসে না, খালি খালি থাকে বেশ সব কিছু। আমি সেই সকালবেলা একটা জ্যাকেট, একটা শাল আর একটা লাঠি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি বিদেশীদের কসরত দেখতে। স্বদেশি খুব একটা দেখা যায় না সকালে, বিকেল থেকেই তাদের সময় শুরু হয়, চানাচুর, মাংশ আর রামের বোতল নিয়ে বসে পড়ে ঘরের মধ্যে। আমিও গিলি, কিন্তু আমার আবার রামে ভক্তি কম, তাই সাহেবি বোতল নিয়ে গত ত্রিশ বছরের মত আজও মৌনব্রত নিয়ে বসে বসে টিভি দেখি। আমার স্ত্রী তখন হয় মোবাইলে, নয়তো একটা বই নিয়ে বসে থাকে। সত্যি, এটা একটা মজার ব্যেপার, আমাদের কথা বার্তা মোটামুটি বিয়ের দু-বছরের মধ্যেই হয়ে গিয়েছিলো, তারপরের তিন বছর চেষ্টা চলেছে কথা খুঁজে বের করার, কিন্তু পাওয়া যায়নি, যেমন আমার নতুন কিছু কথা আসেনি, তারও তেমনই। আমাদের ছেলেপুলেও নেই যে তার সংসারের বেগুন আলু মুলোতে নিজের মাথা লাগাবো, তাই একদম সুন্দরভাবে দুজনে মিলেই একটাই ঘরের ভিতর একসঙ্গে যে যার মতন জীবন কাটাচ্ছি।

মোবাইল ব্যাপারটা আমার ঠিক ধাতে আসে না, আমি বরং কম্পিউটারে বেশ সড়গড়। আমার বউ এর উলটোটা, সে মোটামুটি কাজের লোককেও পারলে মোবাইলে লিখে নির্দেশ দেয়। বাইরের লোকের সঙ্গে কথা কমাতে কমাতে এখন আর তেমন আমাদের খোঁজ খবর রাখারও কেউ নেই, আমরাও আজকাল আর তেমন খোঁজ খবর খুব একটা রাখিনা দেশদুনিয়ার। কোথায় কার বাড়ি লাউএর ঝোল রান্না হয়েছে আর কার ছেলে মেয়ে আমেরিকা গিয়ে বকফুলের বড়া বানিয়ে খেয়েছে বা কার নাতি বেঙ্গলি তে কথা বলতেই পারে না, এইসব শোনার বা শুনে বেশ একটা বিজ্ঞ বিজ্ঞ মন্তব্য করার দরকার পড়ে না। সাতে নেই, পাঁচে নেই, বউ এর সঙ্গেই পঁয়ত্রিশ বছরের বিবাহিত জীবনের মধ্যে গত ত্রিশ বছরে মেরেকেটে ত্রিশটা কথা, যেটা কিনা এখনও মনে আছে, বলেছি কিনা সন্দেহ। চুটিয়ে চাকরি করেছি, প্রচুর জায়গা ঘুরেছি কিছুটা বেড়ানোর তাগিদে, কিছুটা চাকরির জন্যে আর সত্যি বলতে লজ্জা নেই, বাকিটা লোক দেখাতে। হ্যাঁ, মিস্টার মিত্তির চললেন অস্ট্রেলিয়া, তো পরেরবার আমাকেও একটা নিউজিল্যান্ড ভ্রমন করতেই হবে! তবে এইসব করেও বিন্দাস চালিয়ে গেছি জীবন।

ভাল একটা চাকরি ছিল, বেসরকারি কিন্তু ভাল মাইনে। জীবনের প্রথম তিন বছর খুব কম টাকায় চাকরি করেছি, তারপরে সবই বেশ মোটা মাইনের। প্রথমের দিকে জমানোর টাকা থাকতো না, পরের দিকে কিছুদিন জমানোর পরে বুঝলাম এর কোন মানেই হয়না, কিন্তু তাহলেও বেশ কিছু টাকা জমে যেত, তার একটা বড় কারন যদিও আমাদের ছেলেপুলে না থাকা, হাসপাতালের খরচা নেই, পড়ানর খরচা নেই, আবদার মেটানোরও দরকার নেই, তাই বাষট্টি বছরের পরেও যখন দ্বিতীয় বারের জন্যে আমার কন্ট্রাক্ট আরও দুবছর বাড়ানোর কথা উঠল বোর্ডের মীটিঙে, আমি সোজাসুজি না বলে দিলাম। সাদা জামা, কাল প্যান্ট আর চকচকে জুতোর জীবন অনেক হয়েছে, এবার মরার আগে ঢিলে পাজামা আর তার উপরে আরও ঢিলে কুর্তা পরে কটা দিন একটু আরামে কাটাতে চাই। কিন্তু এটারও একটা সমস্যা আছে, একরকমের জীবন ছেড়ে পরেরদিনই অন্য জীবনে ফেরা কিন্তু খুব সহজ হয়না, কিন্তু কপাল ভাল আমার, আমি প্রথমদিন থেকেই একেবারে স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠলাম। তারপর থেকে শীতকালে দশদিনের জন্যে হৃষীকেশ, গরমকালে দশদিনের জন্যে দার্জিলিংটা আমি বা আমরা মোটামুটি ঠিক করেই রেখেছি। বর্ষাকালে আমাদের বিবাহবার্ষিকী, তাই বর্ষাকালে কোথাও যাওয়াটা আমাদের দুজনের একটা মীটিঙের পরে ঠিক হয়। আমার পছন্দ আমার স্ত্রীর পছন্দ হয়না, আবার আমার তাঁর পছন্দ পোষায়না, কিন্তু বেড়ানোর তাগিদে দুজনেই দুজনের অপছন্দটা সহ্য করে এগিয়ে চলি, যেভাবে চলেছি এতটা পথ। এইবার গেছিলাম শ্রীলঙ্কা।

যাইহোক, মধুর দোকানে ফেরা যাক, যেহেতু কম কথা বলে অভ্যেস হয়ে গেছে, আর এদিকে বয়েসটাও বেড়েছে অনেকটাই, তাই একটা কথা লিখতে গেলেই অনেক কথা চলে আসে। মধুই বলেছিল পাশের একটা গলি দেখিয়ে, ওটা দিয়ে গেলে একটা ঢাল পড়বে, আর সেটা দিয়ে নেমে গেলেই নাকি গঙ্গা। গত তিনদিন ধরে এই রাস্তাটাই ফলো করছি। সকালবেলা দারুন ঠাণ্ডা একটা হাওয়া দেয়, মাফলারটা ভাল করে জড়িয়ে সেটা দিয়েই নেমে যাই।

শুক্রবার, সকালের দিকে ভিড় একেবারেই থাকেনা, বিকেলের থেকে অল্প অল্প করে লোক বাড়ে, সবই পরিযায়ী পাখি, তীর্থের নামে মদ গিলতে আসে, আমার মতই ভণ্ডের দল আর এইজন্যেই আমার ভাল লাগে এই হৃষীকেশ। এখানে তীর্থ আছে, রাতেরবেলা বাইজী নাচের কাছাকাছি মোচ্ছব আছে, বেওসা আছে আর খোঁজ করলে বেশ্যাও নিশ্চয় পাওয়া যাবে বলেই আমার বিশ্বাস। লোকে এখানে যোগা করে, রাতেরবেলা ভোগা করে। সব থেকে ভাল লাগে এটা দেখে যে এইসব কিছুই কেমন একটা ঘোমটার আড়ালে। এখানে তীর্থও হয় অন্যরকমভাবে। মানে যদিও এটা হরিদ্বারের উপরে, কিন্তু তীর্থ-গুরুত্বের মাপকাঠিতে কম, আবার এখান থেকে আরও উপরে উঠে গেলে দেবপ্রয়াগ, তারও উপরে কেদারনাথ, বদ্রিনাথ। অর্থাৎ ঠিক মাঝামাঝি একটা গুরুত্ব নিয়ে সমতল আর পাহাড়ের মাঝামাঝি জায়গায় থেকে যোগা থেকে ভোগা উপহার দিচ্ছে এই জায়গা। এখানে অনেকবছর আগে বিটলস এর লোকেরা এসেছিল আত্মানুসন্ধান করতে, এখানেই সেই বিখ্যাত নীলকণ্ঠমুনির মন্দির, আবার এখানেই প্রত্যেক গঙ্গার ঘাটে লুকিয়ে গাঞ্জা আর শহর থেকে ছুটি নিয়ে সময় কাটাতে আসা তরুন তরুণীর মিলনের জায়গা। এখানে কিছু দোকানে মাছ মাংশ পাওয়া যায়, কিন্তু প্রকাশ্যে নয়, বলে রাখলে দু-তিন ঘণ্টা পরে পাওয়া যাবে। রামঝুলা আর লক্ষ্মণঝুলার মধ্যে কোনটা বড়, তা নিয়ে তর্কের অবকাশ না থাকলেও কোন যোগে শরীরের কোন জায়গার ঠিক কতটা উপকার হবে, তা নিয়ে প্রচুর লোকের প্রচুর তর্ক প্রত্যেকটা দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে, আর তাদের কথা অনুযায়ী তাদের পদ্ধতিটাই সব থেকে ভাল। আমি অবিশ্যি আমার পদ্ধতিতেই চলি।

আমি যাওয়ার সময় এইসব ভাবতে ভাবতে মধুর দোকানে এক কাপ চা খাই, তারপরে ঠিক একটি ঘণ্টা হাঁটি, মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে যায়, ফুসফুসটাও কেমন একটা দম পায়, তারপরে ফেরার সময়ে আরেক কাপ চা গিলে আয়েশ করে কলকাতা থেকে নিয়ে যাওয়া বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে হোটেলে ফিরে আসি। গত কয়েকদিন ধরে বুকের বাঁদিকে একটা চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে, আর বয়েসটা এমনই যে কিছু হলেই মনে হয় কিছু হয়ে যাবে। এমনিতে কিছু হয়ে গেলে তাতে আপত্ত্যি বেশি কিছু নেই, কিন্তু না বলে কিছু হয়ে গেলে নিজেরই হয়ত একটু খারাপ লাগবে।

সে যাই হোক, আজ সকালের দিকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি ফিরছিলাম ত্রিমূর্তি গুরু দত্ত আশ্রমের পাশ দিয়ে, হঠাৎ করে মনে হল একটা চেনা ছায়া পাশ দিয়ে চলে গেল। তবে চেনা বলা ভুল, অন্তত আজ চল্লিশ বছর পরে তাকে চিনে ফেলার প্রশ্নই আসেনা, কিন্তু কখনো কখনো এমন কিছু ঘটে যায় যে চমকে উঠতে হয়, আর সেই ঘটনার ঘোর কাটাতে সময় লাগে।

বয়েস বাড়ার পরে একটা জিনিস বুঝতে পারি, জীবনে যা কিছু ঘটে, সব কিছু ঘটতে দেওয়াই ভাল। ভাল জিনিস হয়ত তেমন মনে থাকেনা, কিন্তু দুষ্টুমি, বা যত বাজেকাজ, সব ঠিক মনে থেকে যায়, আর কখনো কখনো নিজের অবচেতনেই নিজেরাই হাসতে পারি, বা হয়ত মনে করে ভাবতে পারি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আমার মনে পড়েনা আমি জীবনে কতবার প্রথম হয়েছি স্কুলের পরীক্ষায়, কিন্তু এটা ঠিক মনে আছে যে প্রথমদিনেই আমাকে কান ধরে দাঁড়াতে হয়েছিল।

মাধ্যমিকের সার্টিফিকেট বয়েসের প্রমান ছাড়া আর কোন কাজে লাগেনি পরবর্তীকালে, কিন্তু সার্টিফিকেট আনার সময়টা মনে আছে, আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে ভাবছিলাম অন্যস্কুলে ভর্তির ফর্ম তুলবো কারন সমীরণের বান্ধবী আমাদের স্কুলে নয়, ভর্তি হবে নাকি আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী স্কুলে। তারপরে যদিও সে দরকার পরেনি, কারণ সায়নি আমাদের স্কুলেই ভর্তি হয়েছিল আর সমীরণের জীবনের প্রচুর ব্যাথার সঙ্গে আরও একটি ব্যাথা যোগ করে চলে গিয়েছিলো অনেকদুরে, যে দূর থেকে আর কখনও ফেরা যায়না।

টানা তিনমাস সমীরণ আমাদের কয়েকজনের সঙ্গে ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলেনি, যতক্ষণনা তাঁর চোখের জল মুছিয়ে দিতে মালবিকার আবির্ভাব ঘটে। মালবিকার আবির্ভাবের পরে টানা ছয়মাস আমাদেরও দরকার পড়েনি, যতক্ষণনা সায়নি সমীরণকে ছেড়ে সময় কাটাতে শুরু করে সৌম্যের সাথে আর সমীরণ আবার নিজেকে আমাদের দলে সমর্পণ করে। সমীরণের ঠিক কতগুলি প্রেম ঘটেছিল, সেটা ও কলেজের থার্ড ইয়ার থেকেই মোটামুটি ভুলে যেত, তবে তখনই কম করে হাফ ডজনের থেকে কম ছিলনা, আর প্রেম যখন ছিল, তখন ব্যাথাও ছিল, আর ব্যাথাও যখন ছিল, তাই আমাদেরও দরকার ভালমতই ছিল, আর সমীরণ আমাদের এত ভাল বন্ধু ছিল যে তাঁর ব্যাথা মানে আমাদের সাহারা মরুভুমির মধ্যেও মউসিনরামের উদয় ছিল প্রায় দ্বিমাসিক ঘটনা। সমীরণের একটা করে ব্যাথা বাড়বে, আর সেটা ভোলার জন্যে সবার আগে আমাদের জমায়েত হত ছউঘুপির মাঠে, তারপরে প্রচুর সিগারেটের সাথে আমরা সব ফেলু মিত্তিরের মত ঘটনার কারন অনুসন্ধানে ব্যাস্ত হয়ে পরতাম আর সেই সুযোগে সমীরণ আবার অন্য কাউকে তাঁর চোখের জল মোছানোর সঙ্গী বানিয়ে নিত। পরের দিকে আমরা আমাদের এই কাজের নাম দিয়েছিলাম পর-বিবাহ-নর্তকী, মানে নিজেদের যেন বিয়ে হওয়ার নয়, তাই অন্যের বিয়েতেই নেচে আসি, সোজা কথায়, বান্ধবীর খোঁজের দরকার নেই, সমীরণের গণ্ডাখানেক বান্ধবীদের নিয়ে চর্চাতেই ব্যাস্ত ছিলাম।

সেই সমীরণের সাথেই আমার বন্ধুত্বটা শেষ হয়ে গেছিলো ওরই এক সম্পর্কের টানাপড়েনে। কলেজের পড়া শেষ করে আমি তখন সদ্য চাকরিতে ঢুকেছি, নকশাল আমলের লড়াইতে আমাদের সেভাবে পরতে হয়নি, কিন্তু রাজনৈতিক টানাপড়েন দেখা হয়েগেছে, কংগ্রেসের যুগ শেষ হয়ে লাল সেলামের আমলে আমাদের সব থেকে বড় সঙ্গী ছিল রাজনৈতিক চেতনা, মনে হত, মার্ক্স আর এঙ্গেলের সাথে আমাদেরও দেশে আস্তে আস্তে সমাজবিপ্লবের বন্যা বয়ে যাবে, আমাদের দেশেও প্রত্যেকটা মানুষ খেতে পাবে, রাতে শোয়ার জন্যে পাবে একটা ছাত, আর কোন শিশু অপুষ্টির শিকার হয়ে মরবে না, আর ভিয়েতনামের লোকেরা আমার আপনজন, আমার নিজের ভাইয়ের থেকেও আপন। রাষ্ট্রে ইন্দিরা গান্ধী, কখনও জোট সরকার, বাংলায় স্লোগান তুলতাম, তোমার নাম আমার নাম, আমার দেশ ভিয়েতনাম, বা কখনও, এ স্বাধীনতা ঝুটা হে, কিন্তু এভাবেই আস্তে আস্তে নিজের একটা পরিচিতি তৈরি হয়ে গেছিলো। লোকে জানত আমাকে বামপন্থী হিসেবে। আর বামপন্থার পুরস্কার পেলাম একটা চাকরি। যে কোম্পানিতে চাকরি পেলাম, সেখানেই ছিল সমীরণের দ্বিতীয় প্রেম মালবিকা। রোজই একসাথে যাতায়াত, একসাথে কাজ করার সুবাদে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম মালবিকার সাথে। তবে তখনকার ঘনিষ্ঠতা এখনকার মত চুমু দিয়ে শুরু হত না। ঠিক মনে নেই, কিন্তু চুমুতে পৌঁছতে একবছরের বেশি সময় লেগেছিল। শহরতলীর ছেলে আমি, আর আমাদের বন্ধুত্বের একটা ঘনিষ্ঠ দল ছিল। আমরা ছয়জন ছিলাম খুবই কাছের, আর তাতে অতি অবশ্যই সমীরণ ছিল। বন্ধুদের মধ্যে আমার সম্পর্কের কথা পৌঁছতে দেরি হল না, ছউঘুপির মাঠে সবার সামনে আমাকে আমাদের বন্ধুত্বের আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হল, আর কি করে জানিনা সবার মধ্যেই আমাকে নিয়ে, আমার বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন উঠে গেল, আর সেদিন সন্ধ্যেবেলায় যখন আমরা আমাদের সাইকেল নিয়ে উঠলাম, আমি বুঝতে পারলাম, ওরা আর কেউ আমার বন্ধু নয়, আমি আর দরকারি নই তাদের কাছে!

আমিও আর যাইনি বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে তাদের কাছে, মালবিকার সঙ্গে সম্পর্কটা হারিয়ে গেল পারিবারিক টানাপড়েনে। মালবিকার বাবা পাত্র খুঁজে আনলেন আর আমাদের সম্পর্কের পূর্ণতা দাবি করার আগেই বিয়ে হয়ে গেল তার। সেই ঘটনার পরে চল্লিশ বছর কেটে গেছে। আমি চাকরি নিয়ে চলে যাই দিল্লী। তারপরে আস্তে আস্তে পদোন্নতি, নিজেরও বিয়ে। মন থেকে মালবিকা মুছেই গেছিলো, বা মাঝেও খুব একটা কিছু মনেও পড়েনি, সমীরণের হয়তো দ্বিতীয় প্রেম ছিল, কিন্তু আমার প্রথম প্রেম কিন্তু মালবিকাই। তাহলেও আমার এইসব ঠুনকো অনুভবের বড়ই অভাব, তাই যেদিন মালবিকা ছেড়ে চলে গেছে, সেদিন থেকে আমিও আর তার দিকে তাকাইনি, না, সমীরণ বা অন্য কারও কাছেও আবার বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে ফেরত যাইনি। যে পথ চলে গেছে, আমি সেই পথেই চলতে পছন্দ করি।

কিন্তু আজ হঠাৎ কি হল জানি না, সেই সবজে রঙের শাড়িপড়া, কাঁচাপাকা চুলের চেনা ছায়াটা বড্ড চেনা চেনা লাগছে। আমি আবার সেই রাস্তা ধরলাম, যে রাস্তা দিয়ে একটু আগেই ফিরে এসেছি, যে রাস্তা দিয়ে একটু আগেই হয়তো আমার চেনা ছায়া এগিয়ে গেছে উলটোদিকে। মহীপালের রুদ্রাক্ষের দোকানটা পার হতেই চোখে পরে গেল সেই মুখ, সে মুখ ভোলার নয়, চেনা ছায়া সত্যিই আমার চেনা, অন্তত কখনও চেনা ছিল। সঙ্গের ভদ্রলোকটিকে নিয়ে মধুর দোকানে মাটির ভাঁড়ে চা খাচ্ছে। আমাকে এগোতে গেলে তাদের পেরিয়ে যেতে হয়, পিছতে গেলে কেমন একটু অদ্ভুত লাগে, কিন্তু কিছু করার নেই, বয়েসের সাথে নিজের পা’ও কেমন অনিশ্চয়তায় ভুগছে, আমি বোধয় তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকেই, তখনই আমার দিকেই চোখ পড়লো ওর, আর তখনই আমার পায়ে সাড় ফিরে এলো, আমি হঠাৎ কিছু মনে পড়েছে ভাব করে ফেরার রাস্তা নিলাম, ঠিক বুঝতে পারলাম না আমাকে চিনেছে কিনা বা তার চোখে মুখে কিছু ভাবান্তর হল কিনা, বা দূর থেকে ঠাহর করতে পারলামনা কোন দীর্ঘশ্বাস পড়লো কিনা।

 

Debraj

(Pic Courtesy:Google)

27.06.2018

Mumbai

stickers-a-styleAaah…finally back on this page, this site. Nope, i didnt find anything to write since i last wrote something and right now also i dont have anything to mention and whats more, i doubt tomorrow i will get something to write too but still thought of playing with Keyboards. SOmetime it helps, when you know you have nothing to do but still you breathe as it happens under automatic process, likewise, when one got nothing to do and really submerged in to a deep hole knowing no way out of the darkness, can let the fingers run ‘automatically’ on the keyboard. i am exactly doing the same, i am not caring about the grammar, dont have anything in mind, oops, i have a lot of things in mind and actually having trouble to channelize it.

Anyway, lets not talk much, sorry write much, only will share a few good thoughts came in my mind,

  1. Need not to do good to anyone, just done do bad to anyone, better you don’t do anything for anyone
  2. Even most precious metals, stones are invisible in darkness, consider yourself to be the valuable one and blame darkness for not being recognized
  3. ‘Fuck’ is more powerful to calm you down than uttering “Om” sometimes, and most of the times you can say it in-front of anyone and that also adds value to your personality
  4. And lastly, if you seriously say, Fuck, ensure even last sec of hardness is not wasted

Thanks

May come some other time with some better ideas and yes, may be with some good mood to write another trash.

05.06.2018

Mumbai

W1

Every day morning I wake up late with lots of enthusiasm and positive thoughts. The moment after lots of struggle with irritating alarm of mobile I finally open up my eyes, I feel it’s almost sunny outside and all other members in my family except me have already finished their one hour routine job. Still i don’t mind getting up late and get ready for office within a record sprint time of fifteen minutes which includes relief from bowel pressure, bathing, dressing, and breakfast and then a Michael Schumacher drive to office. Then whole day I work in office, basically attend a lots of meetings without any idea of my presence and then indulge myself seriously on some excel sheets. In between that period of my so called busy office hours i keep on checking official mails, personal mails and obviously without any fail chew up news papers virtually. While reading a good story in news paper the first thing comes in my mind is always same, i could have been better writer than this idiot reporter. I start feeling that some reporters simply don’t have the capacity to mix thrill with story, humour with energy. Height of happiness happens then when i close all my windows in laptop except an important excel sheet and then open a new Microsoft Word file to write down something on anything. Seriously I don’t even understand how easily I can spend a day from lunch hours to office leaving hours without typing a single word because not a single topic comes in my mind. I feel of writing about the sunny weather outside, then chilling cold in night but what to write for that? Is that a new thing i am trying to write or seriously there is something I lack of. I mean a person who can think, day dream almost every day but can’t write a single page without any pre-defined subject or something on which none put a light before. Yes, I do agree Mr. Google has helped us to know more but killed a few super writing skilled powerful person like me.

Whenever I think, I come up with lots of ideas. Any kind of ideas can be generated through me, or by me. Ok, I will give an example. While in class VIII, I told my brother that i want to be a tea-vendor in future. Throughout the years he proved himself to be my most consistent listener without making fun of me and obviously without helping me developing my ideas too. Se innocently asked me, “why and how?” I shared a dream with him. I will open up a tea stall in our nearby area like bus-stand, paper vendor, and political party office. The shop will be small but with full of ideas inside. I will not hang up any posters of any great people but surely write some ideas of those great people. Like a shop with a theme to generate and develop some dreams. Then slowly I will extend my business by buying another place with the same set up. Good quality tea, good and polite person willingly entertain people with ideas and then still keeping the price competitive with the market. When there will be two tea stalls in same town, then i will expand it by buying one more place. When I will own three tea stalls, then each and every stall will bear some kind of definitive theme. Like one tea stall will have posters or materials of sports. According to me, keeping a bat and ball with a small crease with stumps will be more interesting that pasting a poster of Sachin Tendulkar. Another place may bear theme – love. I will not keep photo poster of Romeo-Juliette or Ranjha-Majnu. In place of these can keep some world known icons like lots of red & blue balloons and a table sized replica of Tajmahal.

All these are ideas and people love ideas. People develop ideas every time. Somewhere i read Mr. Bill Gates once said that he will recruit a less active person than a super active person, because less active person will always come out with a shortcut. While I travel, I develop ideas. I plan to write a lot short stories or story about how young people in India are demotivated with present political scenario of our country, I feel of writing about my maid who works all day long to earn bread for her three daughters and drug addicted husband. I think of writing about poetry believing how much I used to get appreciations from my friends. I feel of writing on women in my life but the moment I start scratching in paper by pen, suddenly everything vanishes away. Even after completing a whole paragraph of may be around 100 words, suddenly I start feeling that whatever I have written are just shit and of no use. It doesn’t give me happiness. I suddenly doubt my calibre of writing anything. I feel frustrated. After spending almost four to five hours with a single word sheet, I find myself suddenly lost the idea of writing. I start looking here and there, think anything to everything to find out an idea and discover just before writing I was full of ideas but none of the ideas satisfy or meet up the satisfaction of my urge of writing.

W2

Sometime it feels like I have an outline of an idea but have no idea on how to develop that in a systematic way.

Another pressure is that whenever I write, I start feeling myself a writer and the pressure of writing something which will be read by some people including a few whom i do know, aware of their abilities and taste light up the dormant fear of writing. The pressure of being read actually stops the fingers from typing in keyboard.

Another type of problem I face when I don’t finish writing on a single go. Like I have developed an idea after struggling for two or more days, even sometime after a long month, then i start writing. I get indulged in it forgetting satisfying hunger etc. I keep on writing with an aim to make it a novel. I continue writing for a whole week on a same story line up and then suddenly due to some pressure I leave that on table and get busy with some other work. Whatever it may be, personal or professional, but after one week when again I start writing, I find myself middle of nowhere. Though in that one week, when I was not able to write anything due to some other reasons, kept on thinking on that plot, story line ups, conclusions etc., almost everything was stored in my mind but after a gap, I feel like scrapping the idea and delete the whole file out of anger.

May be that’s not anger, it’s a kind of frustration. The same situation happens after one gets properly drunk. Alcohol inspires him to drink more and more until all the nerves stop responding but then he has to stand up and go home. He feels himself helpless. He looks after around him and don’t find anyone to help him. He understands that only a good vomiting can help him to gain some strength to finish his work or further works but that doesn’t happen.

Another problem happens when I finish up almost twenty pages and then suddenly one fine morning find that none of the characters are interesting. They actually don’t do anything except killing pages and increase the volume of some shits. The way I tried to depict them from the beginning, reached no where causing utter nuisance. Some great person once said, “we don’t fail, we just don’t give it a last try”, but while saying this, he probably didn’t understand something, i.e. generally people love developing ideas, not a substance. After failing in exam, Thomas Alva Edison probably had that belief. Instead of trying one more time to pass in an exam, he moved on doing something else and later became famous for inventing bulb.

Really I am tired of this Bloggers Block.

Hope I will get over this situation very soon.

Debraj

14.04.2015