নিতাইয়ের ভাইয়ের নাম বিতান। কোন রসিক লোক এরকম একটা গ্রামে এরকম একটা আধুনিক নাম রেখেছিল, বিতান জানে না, তার থেকে দুবছরের বড় নিতাইও জানে না। একবার গ্রামে এক সাহেব এসেছিলেন জমি কিনতে, কি না একটা কারখানা বানাবেন, তারপরে গরশলের দিকে একটা জায়গা চূড়ান্ত করার পরে চলে গেছিলেন। গ্রামের মাথারা, রাজনীতির মাতব্বরেরা বেশ ভিড় করেছিল তার কৃতিত্ব নেওয়ার জন্যে, কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখা গেল, এরকম কিছু আর হল না, শুধু পাঁচিল তোলা থাকলো, নিতাই আর তার দলবল পাঁচিল তুলে দুটো টাকা কামালো আর তার ভাই বিতান, জোগাড় লাগিয়ে পালাল কলকাতা শহরে।
গ্রামে বেশ চর্চা হল কটা দিন, তারপরে আবার সবাই ভুলে গেছিলো, মনে পড়েছিল সেইদিন, যেদিন জল উঠল গ্রামে, সবাই আশ্রয় নিল স্কুলের চাতালে, আর সেখানে বাচ্চা জন্ম দিল নিতাইয়ের বউ। সবাই বলল, মেয়ে হয়েছে, ঘরে লক্ষ্মী এলেন। যেই সে মারা গেল সকালে, প্রাথমিক শোকের ধাক্কা সামলে ওঠার পরে কানুজ্যাঠা বেশ গলা ভারি করে বললেন, “বাবা নিতাই, ওই পাঁচিলের কাজটা করা তোমার উচিত হয়নি। বড়ঠাকুর সেদিন জমিয়ে রেখেছিলেন, আজ জবাব দিলেন, যতই হোক, গ্রামেরই তো জমি!” বড়ঠাকুরের মন্দির বট গাছের নীচে। নিতাই বুঝল না, যারা জমি বেচে টাকা নিয়েছিল, তাদের ঘরে কিছু হল না, কিন্তু তার ঘরে কেন তার সদ্যোজাত মেয়ে মারা গেল। সে ছোট্ট শরীরটা নিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে মাটিচাপা দিয়ে এল আক্রা নদীর তীরে। আজও মাঝে মাঝে ওর বউ বসে থাকে ওইখানে। কি ভাবে আর কি বলে, সেই জানে, কেমন একটা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে নালার মত পাতলা জলের দিকে আর মাঝে মাঝে চোখ মুছে তাকায় সেইখানটায়, যেখানে তার স্বামীর পাঁচিল তোলার অভিশাপ ভাল করে চোখ ফোটার আগেই চিরকালের মত চোখ বুজেছিল।
গতবার ভোটের আগে কথা হয়েছিল বড় পাকা রাস্তা হবে, সোজা যাবে সিউরি, জেলার সদর শহর। দুই তিন গাড়ী মাটিও পড়েছিল রাস্তার ধারে, তারপরে ভোট শুরু হল, যে কথা দিয়েছিল, তাকেই সবাই ভোট দিল, কিন্তু সে জেতার পরেও আর এক গাড়িও মাটি পড়লো না। এটা কোনও নতুন ঘটনা নয়, এখানে এভাবেই চলে আসছে বছরের পর বছর। এখানে আলো আসার কথা হয় সম্বৎসর, এখানে খাল কেটে ক্ষেতে জল আনার কথা হয়, এখানে কথা হয় বাচ্চাদের স্কুল তৈরি করার, কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরেই সব ভো ভা।
চলবে
sundor galpo.
sharmishtha
http://banglakathaoblog.wordpress.com
LikeLike
Thank you Sharmishtha
LikeLike
waiting for the next one!
LikeLike